সোশ্যাল মিডিয়ার বিচ্ছিন্নতার এই সময় বন্ধুতা বড় প্রয়োজন

                                                

 ভাল থেক বন্ধু, দেখা হবে একদিন নিশ্চয় !! 



মানুষ বড় অবুঝ প্রানি, সব সময় নয় কখনো কখনো মাঝে মাঝে মনের মধ্যে বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়, মনের শাখা প্রশাখা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, বুকের মধ্যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়, কেন যায় কিভাবে যায় তা বুঝি নজরে আসে না, আনা যায়না হয়ত কারন বড় সামান্য, হয়ত বা অনেক বড় ছেলেবেলায় একটা পোষা টিয়া খাঁচা ছেড়ে পালিয়েছিল, আমার মনে আছে, স্পষ্ট মনে আছে বুকের মধ্যে তখন এমন অনুভব হয়েছিল যেন মরে যাচ্ছি, মনে হয়েছিল টিয়াটা কেন আমাকেও সাথে করে নিল না আর একবার আমার একটা পোষা বিড়াল মারা গিয়েছিল, আমি দশ বার দিন ভাত খেতে পারিনি, পানি স্পর্শ করতে কষ্ট হয়েছিল বাবা মা মনে শঙ্কা অনুভব করেছিল এই ভেবে যে আমিও বুঝি বিড়ালের কাছে চলে যাবো
এভাবেইতো সময় সামনে যায়, জীব এগিয়ে যায় কত সুখের ছবি না আছে কিন্তু ম্লান যেন দুখের ছবি কত স্পষ্ট, জ্বল জ্বল করে হীরের মত সেদিন আমাদের দুই বন্ধু মিলে সব বন্ধুদের দাওয়াত করল আমরা সবাই একত্রিত হলাম একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যতক্ষণ ছিলাম মনে হয় বেঁচে ছিলাম, প্রানবন্ত ছিলাম বন্ধুদের সাথে থাকা মানে শান্তির মধ্যখানে বসে থাকা, বন্ধুদের সাথে থাকা মানে নিরাপদ থাকা, নির্মল আনন্দে ভেসে থাকা
এত আনন্দের মধ্যে এক বন্ধুর কথা মনে পড়ল, যেন চোখের পাতা থেকে সরাতে পারছিলাম না বন্ধুটি আমাদের মত গ্রাম থেকে উঠে এসেছিল, গ্রামের ধুলো মেখে বড় হয়েছিল জহুরুল হক হলে থাকত নাম বাচ্চু। চিকন চাকন ছিল তার শরীরের গঠন শরীর ছিল দুর্বল কিন্তু মাথা ছিল খুব শার্প কেন জানি খুব মায়া হত ওর জন্য হঠাৎ দৌড়ে এসে বলত দোস্ত দশটা টাকা দাও না কেন, প্রশ্ন করতেই হাসত, কিছু বলত না দিতাম যখন ও খুব খুশী হত বকা দিলেও হাসত। বোকা হাসি, মিষ্টি হাসি।
মনে আছে একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি দুই তিন জন মাস্তান নিয়ে আমার রুমে সে হাজির কি ব্যাপার জিজ্ঞেস করতেই সে মেজাজ দেখিয়ে বলল, আমাকে নোট দাও না তাই ওদের নিয়ে এসেছি আমি হাসলাম, সাথে ওর সাথে যারা এসেছিল তারাও হাসতে লাগল আমি ওকে নোট দিলাম বন্ধুত্তের কি জোর ভীতরে অনুভব করলে কেউ এমন করতে পারে !
ছেলেটির কোন খোঁজ ছিলনা অনেক বছর জানতে পারিনি কোথায় আছে, কেমন আছে ২০০০ সালে একদিন একটা ফোন পেলাম আমি তখন একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করি ফোন পেয়ে আসতে বলি ওকে তার কয়েকদিন পর আমার অফিসে এসে হাজির চেহারাটা খুব জীর্ণ, শরীরে শক্তি আছে বলে মনে হয়নি কি করে জিজ্ঞেস করতেই হতাশার সাগরে দুবে গেল ওর অবুঝ দুটো চোখ জানলাম তার গ্রামের একটি দোকান ঘরে সে থাকে, দেখে মনে হল নেশায় অনেক বেশী অভ্যস্ত হয়ে গেছে নিজেকে সামলাতে পারেনি খুব অসুস্থ
নেশা বড় মারাত্মক সর্বনাশা একটা বিষয় সেটা সবাই জানি। নব্বই এর দশকে এমন নেশাবাজদের আড্ডা বসত টি এস সির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। (এখন বসে কিনা সে খবর জানা হয়নি) রাতে ঐ আড্ডা নতুন মেজাজ পেত। আমাদের ঐ বন্ধুটি সে আড্ডায় নিয়মিত যোগ দিত। কোনভাবে ফেরানো যায়নি তাকে। অনেক চেষ্টা করেছি আমরা, পারিনি।
এখন যেমন আমরা আমাদের স্বজনদের, নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার নগ্ন দশা থেকে মুক্ত করতে পারিনা, তখন ও আমরা ঐ বন্ধুটিকে খারাপ ঐ নেশা থেকে বিরত করতে পারিনি। মানব মন কেন জানি নিজের জন্য খারাপ, নিজের জন্য অকল্যাণকর  এমন কাজের, এমন জিনিসের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়, ভাল ও সুন্দর কাজের প্রতি নয়। নেশা শব্দটিই বুঝি সর্বনাশা। তাই কোনকিছুর প্রতি আগ্রহ সহনীয় থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। সীমা অতিক্রম করলেই বিপত্তি। আমাদের বন্ধুটি ঐ সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। নিজের অজান্তেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মধ্যে এমন ভাবে সেঁটে গিয়েছিল যে অনেক লম্বা সময় তার মধ্যে আটকে ছিল। বের হতে পারেনি।
কয়েকবার টাকা চেয়েছে ওর অসহায় চেহারা দেখে খুব কষ্ট হয়েছে। কিছু টাকা দিয়েছি। নেশা তাকে এমনভাবে বৃত্তবন্দী করেছিল যে টাকা নিয়ে নেশার খোরাক জোগাড় করা ছাড়া এর কিছু ভাবা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। যখন কোন মানুষ  নেশার বৃত্তে আবদ্ধ হয় তখন তার জন্য মমতা দরকার, ভালবাসা দরকার, পাশে আপনজন দরকার যার ধৈর্য ও প্রজ্ঞা আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার প্রভূত অভাব থাকে যার কারণে নেশার তিমির থেকে তারা বাইরে বের হয়ে আসতে পারেনা। আমাদের বন্ধুটিও পারেনি। ওর চোখ মুখ বুঝিয়ে দিল সে কথা। তাই চাকরী করার কথা বলে কোন লাভ হয়নি পরপর তিন বার এসেছে ও আমার কাছে আর আসেনি তারপর লম্বা বিরতি
দশ বার বছর পরে শুনলাম সে চলে গেছে অনেক দূরে, নীল আকাশ তার স্বপ্নকে বুকে টেনে নিয়েছে মাটি তাকে আপন করে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে অবশেষে মাটিই তো সবাইকে আশ্রয় দেয় আপন মমতায়।  
আমরা চোখ থেকে জল ঝরাতে পারি, আর কি করতে পারি আর একটা কাজ পারি, পারি সবাই মিলে আমাদের এক বন্ধুর জন্য যেমন ভালবাসার হাত বাড়িয়েছি তেমন আন্তরিকতা ভালবাসার প্রকাশ ঘটাতে যে ভালবাসায় কোন খাদ নেই, নিখাদ  ভালবাসা, নির্ভেজাল ভালবাসা, অন্তরনিঃসৃত ভালবাসা যা থাকে মনের গভীরে লুকিয়ে মনে হচ্ছিল ওর কথা, ওর অসহায় মুখের কথা, ওর পরিবারের কথা, ওর স্বপ্নের কথা। বার বার মনে হয়েছে বাচ্চুর জন্য দরকার ছিল এমন আপন বন্ধুদের সম্মিলিত প্রয়াস। বন্ধুত্বের ক্ষমতা আকাশকে ছুঁতে পারে, বন্ধুত্বের ভালবাসা সব কষ্টের বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারে, বন্ধুত্বের উদারতা সব কালিমা-অন্ধকার দূর করে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে।  
আজকের দিনে সমাজের সব মানুষ যখন ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে সবাই খুব একা হয়ে যাচ্ছে, নিঃসঙ্গ ও নিরুপায় হয়ে যাচ্ছে তখন বন্ধুতার আহ্বান এই নব্য বিচ্ছিন্ন মানবজাতিকে একত্রিত করার জন্য বড় একটা অনুঘটকের কাজ করতে পারে। বন্ধুতা আজ বড় প্রয়োজন।

Click Here For visit our websites.
সোশ্যাল মিডিয়ার বিচ্ছিন্নতার এই সময় বন্ধুতা বড় প্রয়োজন  সোশ্যাল মিডিয়ার বিচ্ছিন্নতার এই সময় বন্ধুতা বড় প্রয়োজন Reviewed by FinPowers.Com on July 18, 2017 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.