বিষয়টা আমাকে খুব চিন্তায় ফেলল। প্রথমে মনে হল সায়েদুল সাহেব বুঝি চাকরি জীবনে অসৎ উপায়ে অনেক আয় করেছেন আর জায়েদুল সাহেব বুঝি একজন নিরেট সৎ মানুষ তাই জীবনে কিছু করতে পারেননি। আমাদের মানুষিক মূল্যবোধটা খানিকটা এরকম যে দারিদ্র্যের সাথে সততা আর ধনিত্তের সাথে অসততার একটা যোগসূত্র আছে। যখন জায়েদুল সাহেবের সাথে সখ্যতা বাড়ল তখন জানতে পারলাম পুরা ঘটনা। জায়েদুল সাহেবের কথায় সায়েদুল সাহেবের মত সৎ আর নিষ্ঠাবান মানুষ এখনকার দিনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরে আমি সায়েদুল সাহেবের সাথে নিয়মিত মেলামেশার কারনে জানতে পারি আসল রহস্য। আমি বোধকরি উনার মত একজন মানুষের আর্থিক জীবন যদি বিশ্লেষণ করি তবেই আমরা খুব বড় আর্থিক জ্ঞান লাভ করতে পারি। পাশাপাশি জায়েদুল সাহেবের আর্থিক জীবন যদি দেখি তবে দেখব তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার ব্যর্থতার ইতিহাস।
কি এমন করেছিলেন জনাব সায়েদুল যা তাকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছে? কি সেই রহস্য যেটা তার বন্ধু হয়েও জনাব জায়েদুল অনুসরণ করতে পারেনি? এই সত্যটুকুর বিশ্লেষণ যদি আমরা করতে পারি তবে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার একটা পথ আমরা নিজেরাই খুঁজে বের করতে পারি। সায়েদুল সাহেবকে আমি অনেক প্রশ্ন করি। উনি সিক্রেট হিসেবে একটা শব্দ উচ্চারণ করেছেন যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেছিলেন, ডিসিপ্লিন।কথাটি ছোট কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে সবাই বুঝতে পারবেন কথাটির মধ্যে কি লুকিয়ে আছে। ডিসিপ্লিন বলতে আয়ের ক্ষেত্রে ডিসিপ্লিন, ব্যয়ের ক্ষেত্রে ডিসিপ্লিন, আবেগ নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে ডিসিপ্লিন, জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ডিসিপ্লিন- তার অর্থ হচ্ছে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে শৃঙ্খলা অনুসরন। কি পরিমান ত্যাগ তাকে করতে হয়েছে, আরামের, ভোগের সুখের ইত্যাদি। তিনি জানেন জীবন চলার পথে কোথায় থামতে হয়, কেন থামতে হয়, কিভাবে থামতে হয়, থেমে কি করতে হয়। আর এর জন্য শৃঙ্খলার সাথে সাথে জ্ঞান লাগে, প্রজ্ঞা লাগে, ধনাত্মক মনোভাব লাগে, লাগে কোন কিছুতে লেগে থাকার অদম্য শক্তি। আমরা আমাদের চলার পথে অনেক লেখায় এই দুইজন ব্যাক্তিকে স্মরণ করবো কারণ তারা আমাদের দুই পথে টানবে কিন্তু সাফল্যের পথ একটা, দুটো নয়। আমাদের জানতে হবে কোন পথ গ্রহণীয় আর কোন পথ বর্জনীয়। জায়েদুল সাহেব যখন বলেন ‘ যদি আবার জীবন পেতাম তবে সায়েদুল হকের মত আর্থিক জীবনযাপন করতাম।খুব ভুল হয়ে গেছে।কত টাকাই না হাত গলিয়ে বেরিয়ে গেছে, কত সুযোগই না পেয়েছি কিন্তু গ্রহন করিনি।আহ কি ভুল!’ আমিও তাই বলি আহ কি ভুল! কিন্তু আমরা কি পারি ঘড়ির কাঁটাটা উলটা ঘুরাতে? জীবন হচ্ছে একটা বলপয়েন্ট পেনের মত। কালি একবারই রিফিল করা। কালি শেষ তো সব শেষ। যেহেতু জীবন আর একটা যাপন করার সুযোগ নেই, তাই জীবন এত মূল্যবান, এত তার ঐশ্বর্য। কত মানুষ ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়, কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামে, কত মানুষ তার যোগ্যতার চেয়ে অনেক নিচের কাতারে কাজ করে! শৃঙ্খলার অভাব, আর্থিক জ্ঞানের অভাব, সাহসের অভাব, উদ্যোগের অভাব, পরিকল্পনার অভাব, মন নিয়ন্ত্রন করার শক্তির অভাব।
- সাইফুল হোসেন
Click Here for visit our website.
বয়স এক, চাকরি এক কিন্তু আর্থিক অবস্থান ভিন্ন- কেন এমন হল??? একটি সত্যকথন।
Reviewed by FinPowers.Com
on
July 13, 2017
Rating:
Reviewed by FinPowers.Com
on
July 13, 2017
Rating:


No comments: