কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও সিনেমার একজন পরিচিত মুখ আমার অফিসে
এসেছিলেন আমার সাথে এক জরুরী বিষয়ে আলাপ করার জন্য। উনি অভিনয়ের পাশাপাশি একটি বড়
কর্পোরেট অফিসে চাকরি করেন। উনার আসল নামের পরিবর্তে ছদ্দনাম ব্যবহার করছি সঙ্গত
কারনে। উনার নাম হাসিব। খুব বিনয়ী আর মার্জিত তার ব্যবহার। পোশাক পরিচ্ছদ খুব
দামি, গায়ে ব্র্যান্ডেড জামা কাপড়, পারফিউম, পায়ে ব্রান্ডেড জুতা। খুব ভাল লাগল
অনেকদিন পর দেখা হয়ে।
ভদ্রলোক বিবাহিত এবং এক সন্তানের
জনক। মেয়েটি একটি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে নবম শ্রেনিতে পড়ে। স্ত্রী বাসা দেখাশুনা
করেন। বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। ভাইবোনরা দেশের বাইরে থাকেন, তারা স্বাবলম্বী। যতদূর জানি হাসিবের কর্মজীবন শুরু হয়েছে বছর
বিশেক আগে। তার ভাষ্য মতে সে প্রতি বছর ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষ টাকা আয় করেন বেতন,
কমিশন ও অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে। অথচ হাসিব আমার কাছে এসেছিল মাত্র পঞ্চাশ হাজার
টাকা ধার নেবার জন্য। আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। এত টাকা আয় করার পর ও সে
যেহেতু টাকা ধার নেবার জন্য আমার কাছে এসেছিল তাই তাকে কিছু প্রশ্ন না করে পারিনি।
প্রশ্ন করে জেনেছিলাম যে ব্যাঙ্কে তার কোন জমা টাকা নেই, কোন সঞ্চয় পত্র
নেই, কোন ধরনের কোন বিনিয়োগ নেই। তিনটা ক্রেডিট কার্ড সে ব্যবহার করে। সেখানে ঋণ
সাড়ে নয় লক্ষ টাকা। দুটো পারসোনাল লোণ নেয়া আছে। সেখানে বকেয়া আছে আঠার লক্ষ টাকা।
দুটো লোণ ইন্সটলমেন্টে যায় ৫৬,০০০ টাকা আর প্রতি মাসে কিছু কিছু টাকা সে ক্রেডিট
কার্ডের ঋণ পরিশোধে ব্যয় করে। বাকি টাকার একটা বড় অংশ তার হাত খরচ, সংসার চালাতে
তার কষ্ট হয়। স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আপনিতো জানেন আমার একটু খরুচে স্বভাব। হাসিবের এমন কথায় অবাক হয়ে তার মুখের
দিকে তাকিয়ে থাকি।
ধরো, তুমি যদি এখন মারা যাও তোমার স্ত্রী কন্যার কি হবে? তারা কি এখন যে
ধরনের জীবন যাপন করছে সেই একই ধরনের জীবন যাপন করতে পারবে তুমি যদি না থাক তারপরও?
তার নিরব ও ভাব লেশহীন উত্তর, না পারবে না। তার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার কালো
মেঘ। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি আরও কিছুক্ষণ।
ভাই আমার টাকাটার খুব দরকার। সে আকুতির সুরে বলল আমাকে।
- কেন লাগবে তোমার টাকাটা?
- এইটা আপনাকে বলতে চাচ্ছি না।
মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য টাকা একটা দারুন অনুঘটকের কাজ করে। আমি চাই
হাসিবের সাথে আমার সম্পর্কটা থাকুক। তাই টাকাটা তাকে আমি ধার দেইনি।
খুব বেদনা মাখা একটা মুখ নিয়ে সে আমার অফিস ত্যাগ করে। তার বিদায় বেলার
মলিন চেহারা দেখতে আমার মোটেও ভাল লাগেনি। সে চলে যাবার পর আমি অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকি। তারপর কলম নিয়ে সাদা কাগজের উপর লিখতে থাকি। একটি লেখা দরকার বলে আমার মনে হল যা মানুষকে মনে করিয়ে দেবে তার অর্জিত টাকা সে কিভাবে কোথায় খরচ করছে সে সম্পর্কে। তার টাকা নিয়ে সে কি করবে সে সম্পর্কে একটা চিন্তা তার মাথায় উসকে দেয়া দরকার যা তাকে ভাবাবে, সিন্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। এই বই লেখাটা আমি এখন শুরু করতাম না যদি সেদিন হাসিব আমার অফিসে না আসত। হাসিব আমাকে ভাবিয়েছে। আশাকরি এই লেখা আপনাকেও ভাবাবে। আমি চাই সত্যি আপনি একটু ভাবুন...
Click Here for visit our official website.
একটি বই লেখার সুত্রপাত হল পার্সোন্যাল ফাইন্যান্স নিয়ে...
Reviewed by FinPowers.Com
on
July 10, 2017
Rating:

If you like, then you can visit my others blogg
ReplyDeleteভালো লাগলো, আশা করি ভবিষ্যতেও এমন সুন্দর লেখা সবাইকে উপহার দেবেন।।
ReplyDelete