ব্যাংকিং সেক্টর বাঁচাতে যে কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন

ভেন্টিলেটরের সাহায্যে মৃতপ্রায় কোনো ব্যাংক বাঁচিয়ে রেখে অযথা চাপ তৈরি করে লাভ নেই। বাজার অর্থনীতিতে যোগ্যরাই টিকবে, অযোগ্যরা টিকবে না। জোর করে কতদিন পারা যাবে?

- সাইফুল হোসেন
শরীরে রক্ত সঞ্চালনের জন্য শিরা বা ভেইন যেমন প্রয়োজন, অর্থনীতিতে অর্থ সঞ্চালনের জন্য ব্যাংকিং খাত তেমন প্রয়োজন। ধরুন, শরীর হলো অর্থনীতি, রক্ত হলো টাকা আর শিরা হলো ব্যাংকিং খাত। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে হলে, টেকসই করতে হলে শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প কিছু নেই।
যদিও ব্যাংক ছাড়াও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবাসমূহ সারাদেশে টাকা সঞ্চালনার কাজ করতে পারে, তবু ব্যাংকিং ব্যবস্থা লাগবে। কারণ, একটা ব্যাংকে ঘটতে পারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে সম্পর্কিত ও সমন্বিত যাবতীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সেবা, যা অন্য কোনোভাবে আপাতত সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল এবং করোনা-পরবর্তী ভবিষ্যতেও যাবে বলে আশা করি, সেখানে দুর্বল ব্যাংকিং খাত আমাদের চলার গতিকে উপযুক্তভাবে সহায়তা করতে পারবে না। তাই ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালীভাবে টিকিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরিরী হয়ে পড়েছে- সেটা আমরা খেয়াল করি বা না করি। 
প্রাথমিকভাবে যা করতে হবে:
অনেক বিজ্ঞজন অনেকভাবে ব্যাংক খাতের সমস্যা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ব্যাংকিং খাতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্ত থাকার ফলে আমার মনে হয়েছে, খেলাপি ঋণ এ খাতের অন্যতম সমস্যা বটে, তবে প্রথম ও প্রধান সমস্যা নয়। নিচের আলোচনায় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের বিষয়ে পরামর্শ রাখব।
সরকারি পর্যায়ে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসাটা জরুরি। তারা যদি এ নিয়ে ভাবেন, তাহলে ব্যাংকিং খাত উপকৃত হবে বলে আশা রাখি। 
১। ব্যাংক পরিচালনায় ব্যবস্থাপনা টিমকে স্বাধীনতা প্রদান
প্রতিটি প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি পরিচালনার জন্য একটা বোর্ড থাকে। ব্যাংক গঠনের পর একটা যোগ্য বাবস্থাপনা টিম রেডি করে তাদের হাতে ব্যাংকের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দিয়ে উপর থেকে তাদের প্রতি নজরদারি করা, ক্রেডিট পলিসি, এইচ আর পলিসিসহ সব পলিসি তৈরি করা এবং ব্যাংক বাবস্থাপনা সঠিকভাবে ব্যাংকের কাজ এবং এ সংক্রান্ত তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কি না, সরকারের ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ঠিকমতো পালন করছেন কি না- এসব দেখভাল করার দায়িত্ব বোর্ডের ওপর বর্তায়।
কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বোর্ডগুলো ব্যাংক বাবস্থাপনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের ওপর অনেক বেশি প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক চেয়ারম্যান ব্যাংকে নিয়মিত অফিস করেন এবং ব্যাংকের যাবতীয় কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেক ব্যাংকের বাবস্থাপনা পরিচালক মূলত বোর্ডের অত্যন্ত আস্থাভাজন আজ্ঞাবাহী হিসেবে দায়িত্ব পরিপালন করে কোনোভাবে চাকরি বাঁচিয়ে রাখেন।
ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কাকে নিয়োগ দেবে, কাকে ঋণ দেবে, কাকে চাকরি দেবে, কাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করবে, ব্রাঞ্চে কাকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেবে, কাকে কোন অফিসে ট্রান্সফার করবে- সবকিছু বোর্ড থেকে মৌখিক অনুমোদন নিতে হয়। বোর্ড মেম্বাররা ভুলে যান, ব্যাংক কোনো প্রপ্রাইটরশিপ কনসার্ন নয়। ৪০০ কোটি টাকা পেইডআপের একটা ব্যাংক ২০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে কাজ করে। এই ঋণদানযোগ্য টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীর। সবাই বিশ্বাস করে টাকাটা ব্যাংকে রেখেছেন। এই টাকা যাচ্ছেতাই করে ব্যবহার করা যা য়না। কিন্তু বাস্তবে তাই হয়ে থাকে এবং ব্যাংকগুলোকে নিজেদের স্বার্থে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে অনেক ক্ষেত্রে।
সরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক ডিরেক্টরদের হাতে একধরনের বন্দি অবস্থায় থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংকের বাবস্থাপনা পরিচালক তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেন, তার যে লিডারশিপ, তার যে দায়িত্ববোধ- সেটা ভুলে চাকরি বাঁচানোর যুদ্ধে নেমে পড়েন; নিজের মেরুদণ্ড একটা আছে- সেটাও ভুলে যান (গড়পড়তা সব ক্ষেত্রে হয়তো কথাটা ঠিক নয়)।
ব্যাংকের সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশকে একটা শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা উপহার দিতে হলে ব্যাংকের বোর্ডের অযাচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত শক্তি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে কঠিন হতে হবে; বাংলাদেশ ব্যাংক একা কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিজেদের স্বকীয়তা ও পেশাদারিত্বের প্রতি সুবিচার করতে অভ্যস্ত হতে হবে। তাদের ভুলে গেলে চলবে না, টাকা ও ক্ষমতার সঙ্গে সংযোগ থাকলে হয়তো ব্যাংকের ডিরেক্টর হওয়া সম্ভব; কিন্তু একজন এমডি হওয়া সম্ভব নয়।
২। খেলাপি ঋণ আদায়ে অধিক মনোযোগী ও পেশাদার হওয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর তিন মাস আগে (গত জুন শেষে) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। আইএমএফের মতে, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে।
এমন অবস্থায় খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের বড় শক্তি ব্যয় করতে হবে। নতুন ব্যবসা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় হতে হবে প্রধান লক্ষ্য। আইনের প্রয়োগসহ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। দেখা যায়, প্রভাবশালী কেউ হলে ব্যাংক বেশি তাগাদা দেয় না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঋণ খেলাপিদের বয়কট করতে হবে। একজন স্বপ্রণোদিত ঋণখেলাপি তো চোর নয়, ডাকাত। তাকে, তাদেরকে বর্জন না করলে সমাজে অপরাধ কমবে কীভাবে? কেন একজন ঋণ খেলাপি রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত হবেন?
আমাদের উচিত সামাজিকভাবে তাদের চিহ্নিত করে রাখা; সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে তাদের দূরে রাখা। আর যেসব ঋণ খেলাপি পরিস্থিতির শিকার, তাদের প্রণোদনা এবং আর্থিক ও ব্যবস্থাপনা সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে তোলা দরকার। 
৩। সামগ্রিক খরচ কমিয়ে আনতে হবে
প্রত্যেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা খরচ অনেক বেশি। অনেক ব্যাংকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবল রয়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষে অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোতে বাড়তি লোকবল থাকার অভিযোগ উঠেছে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার বিচারে সরকারি বেসরকারি সব ব্যাংকই এই রোগে আক্রান্ত। তাছাড়া শাখা খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে একটি গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং ভাড়ার পরিমাণ বাজার-দরের চেয়ে অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয় সবার সম্মতিতে।
ধরুন, প্রয়োজন ১৫০০ স্কয়ার ফিট জায়গা, কিন্তু ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার বা ৬ হাজার স্কয়ারফিট। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, অনেক ব্যাংকেই অব্যবহৃত জায়গা পড়ে থাকে। তাছাড়া গাড়ি, এন্টারটেইনমেন্ট, স্টেশনারিসহ অন্যান্য যাবতীয় খরচ কমানোর সুযোগ রয়েছে। অপচয় ও অপব্যয় জনিত খরচ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাদ দেওয়া সম্ভব।
অনেক ব্যাংকে অনেকগুলো এএমডি ও ডিএমডি রয়েছেন, যাদের বেতন অনেক বেশি; কিন্তু বাস্তবিক তাদের অনুপস্থিতি ব্যাংকে তেমন প্রভাব তৈরি করে না। আবার অনেক অযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশেষ খাতিরে, যারা বাদ পড়লে ব্যাংকের উপকার হবে; অথচ ম্যানেজমেন্ট তাদের বাদ দিতে পারবে না।
ব্যাংকিং সেক্টর ভালো করতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গড়পড়তা বেতন কমিয়ে আনা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হবে। যারা সত্যিকারের যোগ্য, তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। অযোগ্যদের যোগ্যতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং যদি তারা তা না পারেন, তখন বাদ দেওয়ার চিন্তা করতে হবে।
অদক্ষ লিডারশিপ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং বোর্ডের অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ এই খাতের ক্রমবনতিতে সহায়তা করবে।
৪। দুর্বলকে জোর করে টিকিয়ে রাখার দরকার নেই
কয়েকটি ব্যাংক মূলধনের ঘাটতির সমস্যায় পড়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৯ শেষে, ১২টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এছাড়া শ্রেণিবদ্ধ ঋণের বৃদ্ধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে আরও চাপ তৈরি করছে এবং যদি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কিছু মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে।
বেসিক ব্যাংক লিমিটেড ও পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডসহ বেশ কিছু ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে। সরকারের বিশেষ সুরক্ষায় বেঁচে থাকতে পেরেছে বেসিক ও পদ্মা; অন্যথায় অস্তিত্ব টিকে থাকা সম্ভব হতো বলে বিশ্বাস করা কঠিন। এটি সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয় না। ভেন্টিলেটরের সাহায্যে মৃতপ্রায় কোনো ব্যাংক বাঁচিয়ে রেখে অযথা চাপ তৈরি করে লাভ নেই। বাজার অর্থনীতিতে যোগ্যরাই টিকবে, অযোগ্যরা টিকবে না। জোর করে কতদিন পারা যাবে? ভেন্টিলেটর খুলে দিলেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।
৫। দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেওয়া দরকার
সারা পৃথিবীর সেবাখাত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের কারণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তার সঙ্গে টিকে থাকতে হলে মানবসম্পদের গুণগত পরিবর্ধন অতি জরুরি। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের পেশাদারিত্ব উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের পেছনে পয়সা খরচ করতে খুব অনিচ্ছুক। প্রতিদিন যদি একজন ব্যাংককর্মী তার নিজের উন্নতির জন্য একটু কাজ না করেন এবং প্রতিষ্ঠান সেই দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা না করে, তাহলে ওই কর্মী পেছনে পড়ে যাবেন- এটাই স্বাভাবিক।
নিয়মিত দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করা, প্রযুক্তির সঙ্গে সম্মিলন এবং পড়াশোনা ও  ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে না পারলে প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে যাবে এবং যাচ্ছে। নিয়মিত জনসংযোগ, দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদান এবং গ্রাহকদের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে ব্যাংক সোজা হতে পারবে না।
ব্যাপক জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংক সেবার বাইরে। তাদের ব্যাংকিংয়ের মধ্যে আনতে হলে মোটিভেটেড ও প্রশিক্ষিত কর্মী খুব দরকার। যারা কাজ করতে চান না, তাদের ব্যাংক থেকে বিদায় করে দেওয়া অমূলক নয়। 
৬। শক্তিশালী ব্যাংকিং কমিশন গঠন
ব্যাংকিং খাতের চলমান সমস্যা নিরসনকল্পে ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সঙ্গে সততা, দক্ষতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে- এমন ব্যক্তিকে প্রধান করে একটি শক্তিশালী ব্যাংক কমিশন গঠন করা যেতে পারে এই মর্মে যে, সেই কমিশনের সাজেশন সরকার গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
সেই কমিশন খেলাপি ঋণ আদায়, বৈশ্বিক মান অনুযায়ী শ্রেণিকরণকে সংজ্ঞায়িত করা, করপোরেট দক্ষতা বৃদ্ধিসহ ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে আন্তর্জাতিক মানের করা যায় এবং এসডিজির মানদণ্ড পূরণের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করা যায়- সেই লক্ষে কাজ করবে।
কমিশন একক ঋণগ্রহীতার ঋণপ্রাপ্তির সীমা নতুন করে নির্ধারণ করতেও কাজ করতে পারে, যেন ঋণের ঝুঁকি ও ঋণ-সম্পদের কেন্দ্রিভূতিকরণ কমে আসে।
৭। প্রয়োজনে মার্জার বা অ্যাকুইজিশন
ব্যাংকের চলমান সংকট এবং করোনাভাইরাস পরবর্তী যে অভিঘাত আসছে, তার ফলশ্রুতিতে বেশ কিছু ব্যাংকের অবস্থা টিকে থাকার মতো থাকবে না বলেই মনে হয়। সেই ক্ষেত্রে শক্ত ব্যাংকিং খাত নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত হবে না জোর করে কোনো ব্যাংককে টিকিয়ে রাখা। মার্জার বা অ্যাকুইজিশন প্রতিষ্ঠানকে ভালোভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। এটা শুধু ব্যাংক নয়, অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও হতে পারে।
আমাদের দেশে কোনো বড় সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণ করা সহজ ব্যাপার নয় মোটেও। তবে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদিকে সজাগ দৃষ্টি দেন, তাহলে একটি সুস্থ ও শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গঠন করার লক্ষে আলোচিত ব্যবস্থাসমূহ দ্রুত গ্রহণ করা সম্ভব।
টেকসই ব্যাংকিং খাত আমাদের দরকার। কারণ, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী অর্থনীতির বলয়ে প্রবেশ করার জন্য শক্তিশালী ও দক্ষ ব্যাংকিং খাতের বিকল্প নেই।
  • লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
    ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল
ব্যাংকিং সেক্টর বাঁচাতে যে কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন ব্যাংকিং সেক্টর বাঁচাতে যে কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন Reviewed by FinPowers.Com on May 17, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.